ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার-চট্টগ্রামের লবণ চাষীরা ২০ লাখ মে. টন উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে আগাম মাঠে

এম. জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া ::

গত বছর লবণ চাষ সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক চাষীসহ ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ায় চলতি মৌসুমে আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমে পড়েছে চাষীরা। চাষাবাদে বাড়ছে জমিও। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পুরো দেশের চাহিদা মেটানোর পর উদ্ধৃত্ত উৎপাদনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন লবণ চাষী সমিতির নেতৃবৃন্দ। এবার কক্সবাজারের সাত ও চট্টগ্রামের এক উপজেলায় লবণ চাষের জন্য বিসিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬১ হাজার একর জমি। এ জমিতে ২০ লাখ মেট্টিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদিত লবণই পুরো দেশের চাহিদা মেটায়। এ আট উপজেলায় কয়েক বছর পূর্বেও শুধুমাত্র প্রাকৃতিক (সনাতন) উপায়ে লবণ উৎপাদন হতো। বর্তমানে প্রাকৃতিকের পাশাপাশি চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ, বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থানে কৃত্রিম তাপ ধারণ করে পলিথিন পদ্ধতিতেও লবণ উৎপাদন হচ্ছে। এতে কম জমিতে উৎপাদন হচ্ছে অধিক পরিমাণ লবণ।
আরো জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে অন্তত ২ লাখ মেট্রিক টনের উপর লবণ মজুদ রয়েছে। এই শিল্পের সাথে ৬৪ হাজার ১’শ ৪৭জন লবণ শ্রমিক জড়িত রয়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চকরিয়ার বদরখালী, ইলিশিয়া, ঢেমুশিয়া, কোণাখালী, খুটাখালী, ডুলাহাজারা এবং পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, রাজাখালী ইউনিয়ন ও পেকুয়া সদর ইউনিয়নের আংশিক এলাকার চাষীরা পুরোদমে লবণ চাষ শুরু করেছে। পক্ষকালের মধ্যেই জমি থেকে লবণ উৎপাদন হবে বলে একাধিক লবণ চাষী জানান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষ শুরু করা জমি থেকে আগামি এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ মাস লবণ উৎপাদন হবে বলে চাষিদের অভিমত।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, গত ২০১৬–১৭ অর্থবছরের লবণ মৌসুমে উৎপাদিত লবণের দাম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষীরা লাভবান হয়েছিল। সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে লবণের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় লবণ চাষীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।
তারা আরো জানায়, গত মৌসুমে সরকার বিদেশ থেকে লবণ আমদানি না করায় এবং সরকারিভাবে উপকূলীয় এলাকার লবণ চাষীদের বাঁচাতে লবণ নীতিমালাসহ দাম বৃদ্ধি করায় আমরা এ মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নিয়ে মাঠে নেমেছি। লবণ চাষি মো. হাশেম জানান, দীর্ঘদিন পর বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম মণপ্রতি প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে পুরোদমে লবণ উৎপাদনে আরো সক্রিয় হবেন স্থানীয় চাষীরা। পেকুয়া উপজেলা লবণচাষী সমিতির সভাপতি সিরাজুল মোস্তাফা জানান, পলিথিন পদ্ধতিতে লাভবান হওয়ায় এখন এ পদ্ধতির চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দীর্ঘদিন পর বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণ মণপ্রতি প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ দাম অব্যাহত থাকলে স্থানীয় চাষীরা পুরোদমে লবণ উৎপাদনে আরও সক্রিয় হবেন।
বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি এডভোকেট শহিদুল্লাহ চৌধুরী জানান, প্রাকৃতিক অবস্থা ভাল থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমপক্ষে ১০ হাজার একর বেশি জমিতে লবণ চাষ হবে। ফলে, ৮ উপজেলা থেকেই কমপক্ষে ২০ লাখ মেট্টিক টন লবণ উৎপাদন হবে। এতে পুরো দেশের চাহিদা মিটিয়েও ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ উদ্ধৃত্ত থাকবে। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমদানি নয়, উল্টো বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে লবণ।
বিসিকের উপ–মহাব্যবস্থাপক মো. দিলদার আহমদ বলেন, গত মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক ৬১ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়। এবার ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও জমির পরিমাণ বাড়তে পারে। চাষাবাদ পুরোদমে শুরু হলেই কি পরিমাণ জমিতে চাষ হয়েছে নিরুপণ করা যাবে। দেশে লবণ চাহিদা রয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজার মেট্টিক টন। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ৮ উপজেলা থেকেই লবণ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ মেট্টিক টন। তিনি আরো বলেন, আবহওয়ার উপরেই মূলত লবণ উৎপাদন নির্ভর করে থাকে। গত বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় লবণের উৎপাদন ভাল হয়েছে। যদি এবারও আবহাওয়া ভাল থাকে তবে লবণের লক্ষ্যমাত্রার বেশি উৎপাদন হবে। তাহলে সরকারকে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে হবে না।

পাঠকের মতামত: